দ্বিতীয় সূচনা
পার্ট ১: পরিচয়ের সেই রাস্তাটা
(একটি নামহীন ভালোবাসার সূচনা)
ঘটনাগুলো খুব সাধারণ, কিন্তু কিছু কিছু সাধারণ মুহূর্তই জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। এমনই এক রোজকার দৃশ্য আমার জীবনের স্মৃতির পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে গেছে—একটি পথ, এক মেয়ের মুখ, আর এক তরুণের নীরব অপেক্ষা।
আমাদের বয়স তখন অল্প। কলেজে উঠেছি সদ্য। আমি ছিলাম শহরের এক কলেজের ছাত্র, আর সেও পড়ত আমারই ক্লাসে, কিন্তু আলাদা স্কুলে। যদিও ক্লাস এক, কিন্তু তার সঙ্গে সরাসরি পরিচয়ের কোনো সুযোগ ছিল না।
তবুও, প্রতি সকালে, এক নিখুঁত নিয়মে, আমি তাকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখতাম।
তার স্কুলে যাওয়ার পথটা ছিল আমাদের বাসার পাশ দিয়েই। আমার দিন শুরু হতো তার হেঁটে যাওয়ার শব্দে। মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতার ওপর তার স্যান্ডেলের শব্দ যেন আমার হৃদয়ে গোপন এক দোলা দিয়ে যেত।
সে মাথা নিচু করে হাঁটত, হাতে বই, পিঠে ব্যাগ। চোখে ছিল আত্মবিশ্বাস, মুখে ছিল নীরব দৃঢ়তা।
প্রথমে শুধু তাকানো হতো। তার মুখে কোনো বিশেষ কিছু ছিল না—না সিনেমার মতো গ্ল্যামার, না সমাজে আলোচনার কেন্দ্র হওয়ার রূপ। কিন্তু জানি না কেন, তাকে দেখলেই আমার মন স্থির হয়ে যেত।
প্রথম যেদিন আমি বুঝলাম, সে আমার নজর কেড়ে নিচ্ছে, সেদিন হালকা বৃষ্টি পড়ছিল।
সে তখন তার স্কার্ফ দিয়ে ভেজা চুল গুছাচ্ছিল। আমি দূর থেকে দেখছিলাম। আমার হাতের ছাতাটা ছিল খোলা, কিন্তু মনটা ভিজছিল অন্য কিছুতে।
কখনো সে তাকায়নি আমার দিকে, না চোখে চোখ পড়েছে, তবুও একটা আত্মিক আকর্ষণ তৈরি হচ্ছিল।
দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে, তার প্রতি এই নীরব আগ্রহ দিনে দিনে অভ্যাসে পরিণত হচ্ছিল।
কিন্তু সাহস হচ্ছিল না কিছু বলার।
এভাবে কিছু মাস কেটে গেল। আমি আর সে একে অপরের জন্য অদৃশ্য পরিচিতি হয়ে উঠেছিলাম।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা, তার যাওয়ার সময় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা—এসবই আমার নিত্যদিনের অংশ হয়ে গিয়েছিল।
সে জানত না, কেউ তার চুলে লেগে থাকা পানির ফোঁটা দেখছে, তার হাঁটার ভঙ্গি লক্ষ করছে।
একদিন বিকেলে কলেজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের এক কোণে বসেছিলাম। হঠাৎ সে পাশে এসে দাঁড়াল।
সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার নাম হাসান, তাই না?”
আমি কিছুটা অবাক, কিছুটা নার্ভাস হয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
সে হালকা হাসল।
“তোমার বাসা আমার স্কুলের পাশে। প্রায়ই তোমাকে দেখি,”—বলেই চলে গেল।
আমার ভেতরে তখন যেন বাজছে অজানা রাগ, খুশি আর বিস্ময়ের ঝড়।
সে নিজে এসে কথা বলল! এর চেয়ে বড় কিছু আর হতে পারে?
সেদিনের পর আমার সাহস যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেল। পরদিনই এক বান্ধবীর কাছ থেকে তার নম্বর সংগ্রহ করলাম। খুব অস্বস্তি আর দ্বিধার মধ্যেও একটা মেসেজ দিলাম।
সাধারণ একটি ‘হাই’ দিয়ে শুরু। কোনো জবাব আসেনি প্রথম দিন। দ্বিতীয় দিনও না। তৃতীয় দিনে সে রিপ্লাই করল—
“তুমি আমার নম্বর কোথায় পেলে?”
আমি সত্যটা বললাম। মনে মনে ভাবলাম, হয়তো এখন সে বিরক্ত হবে।
কিন্তু না, সে লিখল, “আচ্ছা, বলো কী দরকার ছিল?”
এভাবেই কথা শুরু হলো।
প্রথম কয়েকদিন ছিল নিছক ভদ্রতা। আমি জিজ্ঞেস করতাম, “কেমন আছো?”
সে সংক্ষেপে উত্তর দিত—“ভালো”।
তবুও আমি থামিনি। জানি না কেন, তার ছোট্ট একটি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ও আমার কাছে ছিল একেকটা চুমুক জীবনের।
সপ্তাহখানেক পর তার কথার দৈর্ঘ্য বাড়ল। উত্তর আসত কিছুটা উষ্ণতায়।
একদিন সে জিজ্ঞেস করল, “তুমি এত কথা বলো কেন?”
আমি হেসে বললাম, “তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।”
সে লিখল, “তুমি খুব ভদ্র, কিন্তু প্লিজ—এগুলো বন্ধুত্বের মধ্যে রাখো।”
আমি যেন সেটাই চেয়েছিলাম—তাকে পাবার কোনো দরজা খোলা থাকুক।
‘বন্ধু’ কথাটা তখন মেনে নিয়েছিলাম, কারণ ভালোবাসার প্রথম শর্তই তো—প্রিয় মানুষকে হারাতে না দেওয়া।
তখনো জানতাম না, সেই বন্ধুত্বই একদিন হয়ে উঠবে আমার জীবনের সবচেয়ে গভীর ভালোবাসা।
আর সেই ভালোবাসাই একদিন আমাকে এমন এক শূন্যতার দিকে ঠেলে দেবে, যেখান থেকে ফিরেও আমি আর আগের মতো হব না।
পার্ট ২: বন্ধুত্বের ছায়ায় লুকোনো ভালোবাসা
(যেখানে বন্ধুত্বের আশ্রয়ে জন্ম নেয় একতরফা আবেগ)
ভালোবাসা সব সময় উচ্চারিত শব্দ নয়।
অনেক সময় তা লুকিয়ে থাকে নীরব ভাঙা হাসির মাঝে, প্রতিদিনকার কিছু সাধারণ কথার আড়ালে, কিংবা দীর্ঘক্ষণ অনলাইনে থাকার অপেক্ষায়।
তার সাথেও আমার সম্পর্কটা এমনই এক রূপ নিয়েছিল।
যেদিন সে বলেছিল, “বন্ধু হয়ে থাকি”, সেদিন প্রথমবার আমার মন বুঝেছিল—সব ভালোবাসার উত্তর পাওয়া যায় না।
তবুও তার বন্ধু হয়ে থাকা মানে ছিল—তাকে হারানো থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
এটাই তো চেয়েছিলাম আমি—সে যেন থাকে। কোনো না কোনো পরিচয়ে, আমার কাছে।
প্রতিদিন মেসেঞ্জারে কথা হতো। সকালে শুভ সকাল, রাতে শুভ রাত্রি—এই সাধারণ শব্দগুলোই হয়ে উঠেছিল আমার জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ মুহূর্ত।
আমার দিন শুরু হতো তার রিপ্লাই দিয়ে, আর শেষ হতো সে কোনো উত্তর না দিলেও অপেক্ষা করতে করতে।
সে কখন খেয়েছে, কখন ক্লাসে গিয়েছে, রাতে কী পড়ছে—সবই জানতাম।
আমার কথা খুব একটা জানতে চাইত না, কিন্তু আমিই বলতাম। সে শোনে কি না, জানতাম না।
তবুও বলতাম।
একদিন সে লিখল, “হাসান, তুমি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো না তো?”
আমি হেসে জবাব দিলাম, “সিরিয়াস না, শুধু যত্ন নিই।”
সে কিছু বলল না, শুধু একটি হাসির ইমোজি পাঠাল।
তবে আমি বুঝলাম, সে ইমোজির মাঝেও এক ধরণের দূরত্ব লুকিয়ে ছিল।
আমার ভেতরে তখন এমন এক যুদ্ধ চলছিল, যা মুখে বলা যাচ্ছিল না।
সে হয়তো আমার কথা প্রতিদিন শুনত, কিন্তু মন দিত কি না, জানতাম না।
তবে একেকটা দিন এমন আসত, যেদিন সে নিজে প্রথমে ম্যাসেজ করত।
তখন মনে হতো—পুরো পৃথিবী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
এভাবে অনেক দিন চলল।
সে আমার জীবনের নিত্য একজন হয়ে গেল—কিন্তু কোনোদিন ‘আমার’ হয়ে উঠল না।
তার জন্মদিন এলে আমি তাকে শুভেচ্ছা দিতাম সবচেয়ে সুন্দর শব্দ দিয়ে,
আর সে লিখত—“ধন্যবাদ”।
তার গলায় কোনো উচ্ছ্বাস থাকত না, তবুও আমি বিশ্বাস করতাম—সে খুশি।
সেই সময়ে আমার মনে হতো—আমি হয়তো একদম ভুল করছি না।
হয়তো সময়ের সাথে সে বুঝবে, হয়তো তার মনেও কিছু একটুর জন্ম হবে।
হয়তো এই বন্ধুত্ব একদিন নিজের নাম বদলে নেবে।
তবে একদিন সে একটু ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিল,
“তুমি কি সত্যিই বন্ধুত্ব চাও, নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু?”
আমি সেদিন অস্বীকার করিনি।
বলেছিলাম, “আমি চাই, তুমি থাকো। যে নামেই হোক।”
সে লিখল,
“তবে এই কথাগুলো আবার যেন না আসে। বন্ধুত্বের বাইরে ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
এই কথাটা আমার হৃদয়ে গেঁথে গেল।
তবুও বন্ধুত্বটা যেন আমার কাছে অনেক বড় হয়ে উঠল।
কারণ আমি জানতাম, সে চলে গেলে, এই নীরব ভালোবাসাও বেঁচে থাকবে না।
তবে কিছু কিছু মুহূর্ত ছিল, যেগুলো আমাকে আবার ভাসিয়ে নিয়ে যেত।
একদিন রাতে হঠাৎ সে লিখল, “হাসান, তুমি যদি আমার স্কুলফ্রেন্ড হতে, তাহলে অনেক কিছু বলতে পারতাম।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন? এখন তো বন্ধুই আছি!”
সে লিখল, “হ্যাঁ, কিন্তু পুরনো বন্ধুদের কাছে কিছু জড়তা থাকে না।”
সেই রাতটা আমি না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলাম।
মনে হচ্ছিল, তার কথার মাঝে যেন একটা না-বলা অনুভব লুকিয়ে আছে।
হয়তো সে নিজেও জানে না—আমার প্রতি তার আসক্তি, নির্ভরতা কিংবা মায়ার গভীরতা কতটা।
এই ‘বন্ধুত্ব’ যেন এক অদৃশ্য সেতু, যার দুই পাশে আমরা দাঁড়িয়ে, কেউ কারো কাছে যেতে পারছি না।
আমি প্রতিদিন এক ধাপ এগোতে চাইতাম, আর সে প্রতিদিন এক ধাপ পিছিয়ে যেত।
তবুও সে ছিল।
তার অনলাইন থাকা, আমার স্টোরি দেখা, মাঝেমধ্যে লেখা “কেমন আছো?”—সবই ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।
কারণ সে ছিল—আমার জীবনে, আমার চিন্তায়, আমার অনুভবে।
আমার বন্ধুরা মাঝে মাঝে বলত, “তুমি তো ওকে খুব ভালোবাসো!”
আমি হেসে বলতাম, “হ্যাঁ, তবে বলিনি কখনো।”
তারা জিজ্ঞেস করত, “সে জানে না?”
আমি বলতাম, “জানে, তবুও জানে না।”
এই দ্বৈত অবস্থান, এই ‘না-প্রেম, না-বন্ধু’ সম্পর্ক আমার ভিতরে গড়ে তুলছিল এক ঘূর্ণি।
সেখানে প্রেম ছিল, ছিল না স্বীকৃতি।
ভালোবাসা ছিল, ছিল না আশা।
বন্ধুত্ব ছিল, ছিল না নিশ্চিততা।
তবুও সে ছিল—সেই সবচেয়ে বড় সত্য,
যে সত্যের পাশে আমি অন্য কোনো প্রশ্ন রাখতে পারিনি।
অসাধারণ! এখন শুরু করছি আপনার গল্পের তৃতীয় অধ্যায়:
পার্ট ৩: হঠাৎ শূন্যতা – যে কোনো ব্যাখ্যা দেয় না
(ভালোবাসার একতরফা নীরব মৃত্যু)
সেই দিনগুলো ছিল অদ্ভুত শান্ত।
সে ছিল, তার ‘বন্ধুত্ব’ ছিল, আর আমি ছিলাম সেই অদৃশ্য আশ্রয়ে বাস করা কেউ—যে নিজের ভালোবাসাকে একপাক্ষিক বললেও হার মানতে পারত না।
প্রতিদিন তাকে খুঁজতাম, কিন্তু দাবি করতাম না।
সে শুধু ছিল… এতেই তৃপ্ত ছিল আমার অস্থির হৃদয়।
তবে শান্ত জলেও ঝড় আসে।
আর সেই ঝড় আসে এমনভাবে, যে ছিন্ন করে দেয় সমস্ত ভরসার ঘর।
সেদিন দুপুরে, হঠাৎ করে ম্যাসেঞ্জারে তার নাম খুঁজে পাই না।
প্রথমে ভেবেছিলাম—নেটওয়ার্ক সমস্যা, হয়তো অ্যাপ গ্লিচ করছে।
কিন্তু বারবার খুঁজেও, বারবার রিফ্রেশ করেও সে ফিরল না।
চোখে-মুখে হঠাৎ একটা অসহ্য শূন্যতা নেমে এল।
অবিশ্বাস আর উৎকণ্ঠার মাঝে গিয়ে দেখি—সে আমাকে ব্লক করেছে।
প্রথমে কিছু বুঝতেই পারিনি।
কোনো রাগ, ঝগড়া, কটূ কথা—কিছুই তো হয়নি।
তার আগের দিন রাতেও কথা হয়েছে—“ভালো থেকো, ঘুমাও ঠিক মতো” বলেছিল সে।
তাহলে হঠাৎ এই নীরব বিদায়?
মাথা কাজ করছিল না।
হৃদয় বলছিল—শুধু একটা ভুল হচ্ছে।
হয়তো ইচ্ছে করে করেনি, হয়তো ভুল করে ক্লিক হয়েছে… কিন্তু না।
সময় যত গড়াচ্ছিল, বুঝতে পারছিলাম—এটা ইচ্ছাকৃত।
আমি কয়েকটি বন্ধুদের মাধ্যমে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম—“যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে, তাহলে বলো। আমি ঠিক করে নেব।”
কিন্তু সে কোনো উত্তর দিল না।
হঠাৎ যেন পৃথিবীর সমস্ত শব্দ থেমে গেল।
আকাশ রোদে ঝলমল করলেও আমার চারপাশে ঘোর অন্ধকার।
খেতে ইচ্ছে করছিল না, হাসতে পারছিলাম না।
বন্ধুরা বলত, “আরে, ব্লক করেছে তো কী হয়েছে! থাক, তোকে তো ভালোবাসেই না।”
কিন্তু তারা বোঝে না—এই না-ভালোবাসা ছিল আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ।
তাকে হারানো মানে ছিল—একটা স্বপ্নের অকালমৃত্যু।
কেউ বলে না, কিন্তু বুকের ভেতর প্রতিটি নিঃশ্বাসেই একটা না-বলা কান্না জমা হতে থাকে।
আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না, সে এরকম করে যেতে পারে।
বারবার মেসেজ পাঠাতাম, যদিও জানতাম সে দেখছে না।
ভেবেছিলাম, যদি কোনোদিন তার মন বদলায়, সে খুলে দেখবে—তখন অন্তত জানতে পারবে, আমি হাল ছাড়িনি।
“তুমি এমন করলে কেন?”
“তুমি ভালো তো?”
“দয়া করে একবার শুধু বলো, আমি কী ভুল করেছি?”
এসব প্রশ্ন একতরফা পাথরের দেয়ালে ছুড়ে মারার মতো ছিল।
প্রতিধ্বনি আসত না।
শুধু নীরবতা—যেটা সবচেয়ে বড় শাস্তি।
একদিন এক বন্ধুকে দিয়ে খবর পাঠালাম, যদি সে নম্বর আনব্লক করে।
বন্ধু জানাল, সে শুধু বলেছে, “না, দরকার নেই।”
আমি হতবাক হয়ে বসে রইলাম—সে এত সহজে “না” বলতে পারল?
যে প্রতিদিন কথা বলত, যাকে আমি মনে প্রাণে জড়িয়ে রেখেছিলাম—সে এমন করে সব কিছু শেষ করে দিল?
এরপর কিছুদিন গভীর হতাশা আমাকে গ্রাস করল।
প্রচণ্ড ভেতরে ভেঙে পড়লেও, বাইরে মুখে হাসি রাখতাম।
যে কাউকে বলতে পারতাম না, আমার ‘বন্ধু’—যার কোনো সম্পর্কের নাম নেই,
সে আমায় ফেলে রেখে গেছে।
এই সম্পর্কের কোনো দাবিও করতে পারি না, কোনো অভিযোগও নয়।
কারণ, আমি কখনোই তার প্রেমিক ছিলাম না—শুধু একজন ছিলাম, যে চুপচাপ ভালোবেসেছিল।
তবুও, সে তো জানত—আমি ভালোবাসি।
তবুও, সে তো জানত—আমি কোনোদিন তাকে কষ্ট দিতে পারব না।
তবে কেন এমন বিদায়?
কেন বলল না কিছু?
সেই “কেন” আমার হৃদয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে হয়ে উঠল এক অন্তহীন লুপ।
জীবনের সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেও, এই ‘কেন’ এখনো অনুত্তরিত।
রাতে ঘুম আসত না।
প্রতিটি শব্দে তাকে খুঁজতাম।
হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলে মনে হতো—হয়তো সে!
কিন্তু না, কখনো সে আসেনি।
একটা সময় আমি নিজেকেই প্রশ্ন করতাম—আমি কি ভালোবাসার যোগ্য ছিলাম না?
না কি আমি ভালোবাসতে জানতাম না?
তবে একটা জিনিস তখনো আমি বুঝতাম না—এই সম্পর্ক শেষ হয়নি।
শুধু যোগাযোগ থেমেছে।
কারণ কিছু সম্পর্কের পরিণতি না থাকলেও প্রভাব থাকে চিরকাল।
আজও আমি তার নাম শুনলে থমকে যাই।
কখনো কোথাও তার নাম লেখা থাকলে চোখ পড়ে যায়।
তার স্কুলের পাশ দিয়ে গেলে আজও মনে হয়—হয়তো সে আসবে, হয়তো হেঁটে যাবে আমার পাশ দিয়ে, যেমন একদিন যেত।